গোপন অধ্যায়: একটি পরকীয়া প্রেমের গল্প
রফিক সাহেব আর শাহানা বেগমের দাম্পত্য জীবন প্রায় বিশ বছরের। তাদের দুটি সন্তান, শান্ত ও শায়লা, দুজনেই এখন কলেজে পড়ে। বাইরে থেকে দেখলে তাদের সংসারকে আদর্শ মনে হয়। রফিক একটি সরকারি অফিসের বড় কর্তা, আর শাহানা সংসার সামলান নিপুণ হাতে। কিন্তু এই আপাত সুখের পেছনে লুকিয়ে ছিল এক না বলা গল্প, এক গোপন অধ্যায়।
রফিক সাহেবের জীবনে একঘেয়েমি ভর করেছিল। প্রতিদিনের একই রুটিন, একই আলোচনা, একই ধরনের সম্পর্ক তাকে হাঁপিয়ে তুলছিল। স্ত্রী শাহানা তার কাজে ব্যস্ত, সন্তানেরা তাদের জগতে। রফিক নিজের ভেতরে একটা শূন্যতা অনুভব করতেন, যা পূরণ করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
ঠিক তখনই তার জীবনে এলো ইশরাত। ইশরাত তাদের অফিসের নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। কর্মদক্ষ, স্মার্ট এবং ভীষণ প্রাণবন্ত একজন নারী। প্রথম থেকেই ইশরাতের সাথে রফিকের কাজের সূত্র ধরে বেশ ভালো যোগাযোগ তৈরি হলো। ইশরাতের সাথে কথা বলতে রফিকের ভালো লাগত। তার ভাবনা-চিন্তা, তার কর্মোদ্যম রফিককে মুগ্ধ করত। ইশরাতও রফিকের অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল।
প্রথমে বন্ধুত্ব, এরপর সেই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে এক অন্য মোড় নিতে শুরু করল। দুপুরের লাঞ্চ ব্রেকে তারা প্রায়ই একসাথে বসত। অফিসের কাজের বাইরেও ব্যক্তিগত গল্প হতো। ইশরাত তার একাকী জীবনের কথা বলত, কিভাবে সে তার স্বপ্নগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। রফিক তার ভেতরের অপ্রাপ্তিগুলোর কথা ইশরাতের সাথে ভাগ করে নিতেন, যা তিনি এতদিন কারো সাথে বলেননি।
একদিন অফিস শেষে বৃষ্টি হচ্ছিল। রফিক ইশরাতকে তার গাড়িতে লিফট অফার করলেন। গাড়িতে বসে তারা কথা বলতে বলতে বুঝতে পারলেন, তারা একে অপরের সঙ্গ কতটা উপভোগ করছেন। সেইদিন থেকেই তাদের সম্পর্কটা অফিসের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যক্তিগত হতে শুরু করল। রাতের বেলা লুকিয়ে মেসেজ দেওয়া, ছুটির দিনে অজুহাত দেখিয়ে বাইরে দেখা করা – এভাবেই তাদের গোপন সম্পর্কটা আরও গভীর হলো।
রফিক বুঝতে পারতেন, তিনি ভুল করছেন। নিজের পরিবার, স্ত্রী, সন্তানদের প্রতি তার দায়িত্বের কথা মনে পড়ত। কিন্তু ইশরাতের সান্নিধ্যে তিনি যে শান্তি আর উত্তেজনা পেতেন, তা থেকে বেরিয়ে আসা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছিল। ইশরাতও জানত রফিক বিবাহিত, কিন্তু সেও এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল এক অজানা টানে। হয়তো সেও নিজের জীবনে কিছু খুঁজছিল, যা রফিকের মধ্যে পেয়েছিল।
তারা শহরের বাইরে নিরিবিলি কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা করত, অথবা এমন কোনো জায়গায় যেত যেখানে তাদের চেনার কেউ নেই। প্রতিটি গোপন সাক্ষাতে তাদের ভেতরের টান আরও তীব্র হতো। তারা একে অপরের প্রতি নির্ভরতা অনুভব করত, যা তাদের নিজেদের জীবনে অনুপস্থিত ছিল।
একদিন শাহানা রফিকের ফোনে একটি অপরিচিত মেসেজ দেখতে পেলেন। মেসেজটি ছিল ইশরাতের। প্রথমত তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি, কিন্তু তারপর যখন তিনি রফিকের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন, তখন তার সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করল। রাফিকের দেরিতে ফেরা, অফিসের কাজের অজুহাতে ঘন ঘন বাইরে যাওয়া, আর তার চোখে এক অদ্ভুত পরিবর্তন – সবকিছু মিলিয়ে শাহানার মনে ঝড় উঠল।
শাহানা সরাসরি রফিককে কিছু বললেন না। তিনি নীরবে সবকিছু লক্ষ্য করতে লাগলেন। তার মনে কষ্ট হচ্ছিল, রাগ হচ্ছিল, কিন্তু বিশ বছরের সম্পর্কটাকে তিনি এত সহজে ভেঙে দিতে চাননি। তিনি শুধু অপেক্ষা করছিলেন, কখন এই গোপন অধ্যায়ের শেষ হবে।
এদিকে রফিক এবং ইশরাতের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল। তারা একে অপরের কাছে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু রফিকের মনে এক অপরাধবোধ কাজ করছিল। তিনি জানতেন, তার এই সম্পর্ক তার পরিবারকে কতটা আঘাত দিতে পারে। অন্যদিকে, ইশরাতও এই লুকোচুরি খেলায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। সে রফিকের কাছে একটা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত চেয়েছিল।
একদিন ইশরাত রফিককে বলল, "রফিক, আমাদের সম্পর্কের একটা পরিণতি দরকার। এভাবে আর চলতে পারে না। হয় তুমি তোমার পরিবারকে সত্যিটা বলবে, নয়তো আমাদের সবকিছু শেষ করতে হবে।"
ইশরাতের এই কথা রফিকের ঘুম হারাম করে দিল। তিনি জানতেন, এই সিদ্ধান্ত তার জীবনকে চিরতরে বদলে দেবে। তিনি তার পরিবারের সুখকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারছিলেন না, আবার ইশরাতকেও ছাড়তে পারছিলেন না।
রফিক বাসায় ফিরলেন একরাশ চিন্তা নিয়ে। শাহানা সেদিন নীরব ছিলেন, কিন্তু তার চোখে ছিল এক গভীর জিজ্ঞাসা। রফিক অনুভব করলেন, শাহানা হয়তো সবকিছু জেনে গেছেন। সেই রাতে রফিক শাহানার কাছে তার সব ভুল স্বীকার করলেন। শাহানা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন, তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। তাদের বিশ বছরের বিশ্বাস মুহূর্তেই যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেল।
পরকীয়া প্রেমের গল্পে হয়তো সবার মতো সুখের সমাপ্তি থাকে না। রফিক এবং শাহানার সম্পর্ক এক চরম পরীক্ষার মুখে পড়ল। ইশরাতের সাথে রফিকের সম্পর্ক শেষ হলো, কিন্তু তার রেশ রয়ে গেল রফিকের পরিবারে। ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর দায়িত্বের এই জটিল সমীকরণে শেষ পর্যন্ত কে জিতল, তা বলা মুশকিল। তবে এই ঘটনা তাদের জীবনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করল, যা হয়তো কোনোদিনও পুরোপুরি শুকাবে না।
গল্পটি আপনার কেমন লেগেছে?