নিষিদ্ধ টান: দেবর-ভাবীর এক গোপন গল্প
শ্রেয়া আর তন্ময়ের সংসারটা বাইরে থেকে দেখতে বেশ সুখীই মনে হয়। দু'বছরের এক মিষ্টি মেয়ে আছে তাদের, নাম রিনি। তন্ময় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো চাকরি করে, আর শ্রেয়া সংসার সামলায়। তাদের ভালোবাসার বাঁধন ছিল দৃঢ়, অন্তত শ্রেয়া তাই ভাবত। কিন্তু তাদের আপাত সুখী জীবনে ধীরে ধীরে অন্য এক ছায়া পড়তে শুরু করেছিল।
তন্ময়ের ছোট ভাই, রাহুল, বছরখানেক হলো তাদের সাথেই থাকছে। রাহুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি এক তরুণ। প্রথম দিকে শ্রেয়া রাহুলকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখত, স্নেহ করত। রাহুলও ভাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। তাদের দিনগুলো বেশ স্বাভাবিক গতিতেই কাটছিল।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের সমীকরণটা বদলাতে শুরু করল। তন্ময় অফিসের কাজে প্রায়ই ব্যস্ত থাকত, রাত করে ফিরত। সাপ্তাহিক ছুটিগুলোতেও তাকে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। শ্রেয়া অনুভব করত, সে যেন ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছে। তার দিনগুলো একঘেয়ে হয়ে উঠছিল। এই শূন্যতার মাঝেই রাহুল যেন এক নতুন আলোর মতো এলো।
রাহুল আর শ্রেয়ার মধ্যে কথা বলার সুযোগ বাড়তে লাগল। একসাথে টিভি দেখা, গল্পের বই পড়া, অথবা রিনির সাথে খেলা – এসবই তাদের নৈকট্য বাড়িয়ে দিচ্ছিল। রাহুল ছিল খুব মিশুক, আর তার কথা বলার ধরণ ছিল খুব আকর্ষণীয়। লতার না বলা কথাগুলোও সে যেন সহজেই বুঝতে পারত। রাহুল নিজেও অনুভব করতে শুরু করেছিল, ভাবীর প্রতি তার অনুভূতিগুলো শুধু শ্রদ্ধার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
একদিন দুপুরে, যখন তন্ময় অফিসে আর রিনি ঘুমিয়ে ছিল, রাহুল আর শ্রেয়া বারান্দায় বসে কথা বলছিল। কথায় কথায় রাহুল তার নিজের কিছু স্বপ্ন আর হতাশার কথা বলতে লাগল। লতা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন, আর সহানুভূতি অনুভব করছিলেন। হঠাৎ করেই রাহুল শ্রেয়ার হাতটা ধরে ফেলল। শ্রেয়া চমকে উঠল, কিন্তু হাতটা সরিয়ে নিতে পারল না। রাহুলের চোখে ছিল এক গভীর আবেগ, যা লতার ভেতরে এক অচেনা আলোড়ন সৃষ্টি করল।
সেই দিন থেকেই তাদের সম্পর্ক এক নতুন মোড় নিল। এরপর থেকে তারা সুযোগ পেলেই একসাথে সময় কাটাত। তন্ময় যখন অফিস থেকে ফিরত না, তখন তারা গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করত, গান শুনত। তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য টান কাজ করছিল, যা নিষিদ্ধ জেনেও তারা অস্বীকার করতে পারছিল না। এই গোপন সম্পর্ক শ্রেয়ার মনে এক মিশ্র অনুভূতি তৈরি করত – একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে গভীর অপরাধবোধ। সে জানত, সে ভুল করছে, কিন্তু রাহুলের সান্নিধ্য তাকে এক নতুন জগতের সন্ধান দিচ্ছিল, যা থেকে বেরিয়ে আসা তার পক্ষে কঠিন ছিল।
রাহুলও ভাবীর প্রতি তার এই অনুভূতির জন্য নিজেকে দোষ দিত। কিন্তু শ্রেয়ার সাথে সময় কাটাতে তার এত ভালো লাগত যে সে নিজেকে আটকাতে পারত না। তারা একে অপরের কাছে তাদের মনের সব কথা খুলে বলত, যা তারা অন্য কারো সাথে বলতে পারত না। তাদের এই গোপন সম্পর্ক দিনের পর দিন আরও গভীর হতে লাগল।
একদিন, রাতের বেলা। তন্ময় অফিসে মিটিংয়ে ব্যস্ত। রাহুল আর শ্রেয়া ড্রয়িংরুমে বসে সিনেমা দেখছিল। রিনি ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ করেই রাহুল শ্রেয়ার কাঁধে মাথা রাখল। শ্রেয়া প্রথমে ইতস্তত করল, কিন্তু তারপর রাহুলের চুলে হাত বুলিয়ে দিল। সেই মুহূর্তে তাদের মধ্যে এক নীরব সম্মতি তৈরি হলো। তারা জানত, তারা এমন কিছু করছে যা সমাজের চোখে ভুল, যা তাদের পরিবারকে ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যকার এই নিষিদ্ধ টান তাদের বিবেককে ছাপিয়ে যাচ্ছিল।
পরের দিনগুলোতে তাদের সম্পর্ক আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠল। সুযোগ পেলেই তারা একে অপরের কাছাকাছি আসত, একে অপরের স্পর্শ অনুভব করত। কিন্তু এই সুখ ছিল ক্ষণস্থায়ী, কারণ এর সাথে জড়িয়ে ছিল ভয় আর অপরাধবোধ।
একদিন, রিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল। রাতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলো। তন্ময় চিন্তিত হয়ে বারবার ফোন করছিল। লতা আর রাহুল দুজনেই হাসপাতালে ছিল। সেই রাতে লতা রাহুলের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে ফেলল, কিন্তু সেই কান্না শুধু রিনির অসুস্থতার জন্য ছিল না, ছিল তাদের জটিল সম্পর্কের জন্যও। লতা অনুভব করল, এই গোপন সম্পর্ক তাকে মানসিক শান্তি দিতে পারছে না, বরং প্রতিনিয়ত তাকে দগ্ধাচ্ছে।
রাহুলও সেই রাতে অনুধাবন করল, তার এই আকর্ষণ হয়তো ক্ষণস্থায়ী। তার ভাবীর সংসার, তার সন্তান – এই সবকিছু সে ভেঙে দিতে পারে না। তাদের এই নীরব ভালোবাসা হয়তো তাদের জীবনকে আরও জটিল করে তুলবে।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তাদের মধ্যে একটা নীরব চুক্তি হলো। তারা তাদের এই গোপন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবে। তাদের জন্য এটা সহজ ছিল না। প্রতিদিন একসাথে থাকার পরও তারা একে অপরের থেকে নিজেদের দূরে রাখতে শুরু করল। তাদের চোখের ভাষা হয়তো অনেক কিছু বলত, কিন্তু মুখে তারা কোনো কথা বলত না।
এই গল্পে হয়তো কোনো সুখী সমাপ্তি নেই। হয়তো সময়ের সাথে সাথে এই নিষিদ্ধ টান ফিকে হয়ে যাবে, অথবা হয়তো সারা জীবনই এক গোপন কষ্টের মতো তাদের মনের গভীরে থেকে যাবে। কিন্তু এটাই পরকীয়া প্রেমের এক কঠিন বাস্তবতা, যেখানে আবেগ আর দায়িত্বের মাঝে টানাপোড়েন চলে, আর শেষে নীরবতা বা অনুশোচনাই হয় এর একমাত্র সঙ্গী।
গল্পটি আপনার কেমন লেগেছে?