ছায়াবৃত্ত: দেবর ভাবির নিষিদ্ধ প্রেম

ছায়াবৃত্ত: দেবর ভাবির নিষিদ্ধ প্রেম


বেলা প্রায় শেষ। পশ্চিমের আকাশে আবির রঙ ছড়িয়ে সূর্যটা যখন ডুবতে বসেছে, তখন গ্রামের মেঠোপথে একা হেঁটে চলেছে মায়া। তার হাতে ধরা ব্যাগটা হালকা, কিন্তু মনের ভার যেন পাহাড় সমান। বিয়ের পর ছয় বছর কেটে গেছে। আকাশ, তার স্বামী, একজন সৎ এবং পরিশ্রমী মানুষ। তাদের ভালোবাসার বাঁধন ছিল দৃঢ়, অন্তত মায়া তাই ভাবত। তাদের ছোট্ট মেয়ে, নিশি, তাদের ভালোবাসার ফসল। কিন্তু আজকাল মায়ার মনে হয়, তাদের সম্পর্কটা বুঝি এক মায়াজাল, যা বাইরে থেকে সুন্দর দেখালেও ভেতরে ভেতরে কেমন যেন ফাঁপা হয়ে আসছে। আকাশের কাজ তাকে প্রায়ই বাইরে রাখে, আর সেই অনুপস্থিতিই মায়াকে গ্রাস করে এক গভীর একাকীত্বে।
সেদিন যখন আকাশের ফুফাতো ভাই, নিলয়, ঢাকা থেকে তাদের গ্রামে বেড়াতে এলো, মায়া জানত না যে তার জীবনে এক নতুন ছায়ার আগমন ঘটতে চলেছে। নিলয়, বছর পঁচিশের যুবক, সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছে। তার চোখে স্বপ্ন, মুখে লেগে আছে শহুরে ঝলমলে জীবনের ছাপ। গ্রামের আটপৌরে পরিবেশে সে যেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রথম প্রথম মায়া তাকে নিতান্তই অতিথি হিসেবে দেখত, যত্ন করত, গল্প করত। নিলয়ের উপস্থিতিতে বাড়ির নীরবতা কাটত, নিশির সাথেও তার ভালো জমেছিল।
নিষিদ্ধ আকর্ষণ: অনুভূতির সূক্ষ্ম টানাপোড়েন
নিলয় ছিল অত্যন্ত চটপটে আর বুদ্ধিমান। গ্রামের জীবন সম্পর্কে তার ছিল প্রবল কৌতূহল। মায়া যখন ক্ষেতে কাজ করতে যেত, পুকুরে গোসল করত, বা সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাত, নিলয় পাশে এসে বসত। সে মায়ার সাথে সহজভাবে মিশে গিয়েছিল, যেন সে তাদের পরিবারেরই একজন। মায়ার ছোট ছোট দুঃখ, না বলা কথাগুলো নিলয় সহজেই বুঝতে পারত। আকাশের অনুপস্থিতিতে মায়া যে একাকীত্বে ভুগত, নিলয়ের সঙ্গ অনেকটাই পূরণ করে দিত। মায়া দেখল, নিলয় তার কাছে কেবল আকাশের ভাই নয়, বরং এক বন্ধু হয়ে উঠেছে, যে তাকে বুঝতে পারে।
একদিন বিকেলে মায়া যখন টিউবওয়েলে পানি তুলছিল, হঠাৎ তার শাড়ির আঁচল কলসি চাপা পড়ে গেল। নিলয় পাশেই ছিল। সে দ্রুত এসে আঁচলটি ছাড়িয়ে দিল। তাদের হাত ছুঁয়ে গেল, আর সেই স্পর্শে মায়ার মনে এক বিদ্যুৎ খেলে গেল। নিলয়ের চোখে সে দেখল এক গভীর আবেদন, যা সে এর আগে কারো চোখে দেখেনি। সেই মুহূর্তে মায়া অনুভব করল, নিলয়ের প্রতি তার অনুভূতি আর কেবল আত্মীয়তার গণ্ডিতে আটকে নেই। এটা ছিল এক নিষিদ্ধ আকর্ষণ, এক গোপন টান, যা তার মনের গভীরে লুকানো আবেগগুলোকে জাগিয়ে তুলল।
এরপর থেকে তাদের দেখা-সাক্ষাৎগুলো আরও নিবিড় হতে লাগল। সুযোগ পেলেই তারা একে অপরের কাছাকাছি আসত। পুকুর ঘাটে, ফসলের মাঠে, বা সন্ধ্যায় ছাদের কোণে—তাদের নীরব চোখে কথা চলত। লুকানো চাহনি, অকারণে স্পর্শ, এমনকি নীরব হাসিতেও তাদের গোপন ভালোবাসার ইঙ্গিত থাকত। রীনার মনে অপরাধবোধের কাঁটা বিঁধলেও, নিলয়ের সান্নিধ্য তাকে এক অদ্ভুত শান্তি দিত। সে যেন জীবনের নতুন এক অর্থ খুঁজে পেয়েছিল। নিলয়ের সাথে কাটানো সময়গুলো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্ত। আকাশের ব্যস্ততা তাদের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিত। তাদের কথোপকথনে এখন শুধু গ্রামের গল্প বা পরিবারের কথা থাকত না, তাতে মিশে যেত ব্যক্তিগত অনুভূতি, স্বপ্ন আর কিছু না বলা কথা।
গোপনীয়তার আড়ালে: এক বিপজ্জনক খেলা
একদিন গভীর রাতে, আকাশ যখন ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে ছিল, বাইরে তখন টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। নিলয় মায়ার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। মায়ার বুক ধুকপুক করছিল। নিলয়কে দেখে মায়ার মনে হলো, তার সমগ্র অস্তিত্ব এই ক্ষণের জন্য ব্যাকুল ছিল। সেদিন রাতে, সামাজিকতার সব বেড়া ভেঙে তারা একে অপরের কাছে ধরা দিল। সেই রাতটা ছিল তাদের ভালোবাসার এক নীরব সাক্ষী, যেখানে দুটি মন সমাজের চোখে নিষিদ্ধ এক সম্পর্কে বাঁধা পড়েছিল। মায়ার মনে হয়েছিল, এই প্রথম সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে খুঁজে পেয়েছে, নিজেকে উজাড় করে দিতে পেরেছে। নিলয়ের উষ্ণ স্পর্শে সে যেন তার সকল শূন্যতা ভুলে গিয়েছিল।
পরের দিনগুলো যেন এক ঘোরের মধ্যে কাটতে লাগল। তাদের লুকানো প্রেম আরও গভীর হতে থাকল। ছোট ছোট সুযোগে তারা একে অপরের কাছাকাছি আসত, একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে নীরব ভাষায় মনের কথা বলত। মায়া জানত, এই সম্পর্ক ঘোর অন্যায়, সমাজের চোখে এক কলঙ্ক। ধরা পড়লে সব সম্মান, সব পরিচিতি এক নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কিন্তু নিলয়ের প্রতি তার আকর্ষণ এতটাই তীব্র ছিল যে, সে আর নিজেকে আটকাতে পারছিল না। তার বিবেক দংশন করত, কিন্তু হৃদয়ের টান ছিল অপ্রতিরোধ্য। আকাশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল শ্রদ্ধার, অভ্যাসের; কিন্তু নিলয়ের প্রতি তার অনুভূতি ছিল এক তীব্র আবেগ, এক উন্মাদনা।
এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং অনুশোচনার ভার
মায়া রোজ রাতে যখন আকাশ ঘুমিয়ে পড়ত, অস্থির মনে বিছানায় শুয়ে থাকত। তার চোখে ভেসে উঠত নিলয়ের মুখ, তার স্পর্শ। এই সম্পর্ক কি চিরকালই লুকানো থাকবে? নাকি একদিন সব প্রকাশ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নগুলো তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। সে জানত, এই পথ কঠিন, কিন্তু এই পথে চলার আকর্ষণ তাকে আরও গভীরভাবে টেনে নিচ্ছিল। তার ভেতরে এক প্রবল দ্বন্দ্ব চলছিল। একদিকে তার সংসার, তার ছোট্ট মেয়ে নিশি, তার সম্মান; অন্যদিকে নিলয়ের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, যা তাকে এক অন্য জীবনের স্বাদ এনে দিয়েছিল।
দিনের পর দিন এই গোপন সম্পর্কের চাপ মায়াকে অস্থির করে তুলছিল। সে জানত না, এই ছায়াবৃত্তের শেষ কোথায়। নিলয় কি তার সাথে চিরকাল থাকবে? নাকি একসময় সেও তার নিজের পথে চলে যাবে? এই চিন্তাগুলো তাকে ঘুমাতে দিত না। প্রতি মুহূর্তে এক অজানা ভয় তাকে তাড়া করত। মায়া শুধু নিলয়ের বাহুডোরে আশ্রয় খুঁজেছিল, যেখানে সকল ভয়, সকল দ্বিধা নিমেষে মিলিয়ে যেত। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও, সেই মুহূর্তে মায়া কেবল তাদের এই নিষিদ্ধ প্রেমের মায়াজালে আটকা পড়েছিল। এই লুকানো ভালোবাসার মূল্য তাকে কী দিতে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.