দেবর ভাবির অবৈধ প্রেম

দেবর ভাবির অবৈধ প্রেম 

সাঁঝবেলায় যখন মন্দিরের কাঁসর ঘণ্টা বাজছিল, তখন আলো ঝলমলে উঠোনে একা বসে ছিল রীনা। তার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছিল, আর তার মন উড়ছিল এক অজানা অতীতে, এক ধূসর বর্তমানে। বিয়ের পর দেখতে দেখতে চার বছর পেরিয়ে গেছে। স্বামী শফিক ভালো মানুষ, কোনো অভিযোগের অবকাশ নেই। তার ভালোবাসাতেও কোনো খাদ ছিল না, কিন্তু রীনার মনে হতো, তাদের সম্পর্কটা যেন একটা সুঁতোয় বাঁধা অভ্যাস, যেখানে ভালোবাসার উষ্ণতাটুকু ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। একঘেয়েমি আর চাপা একাকীত্ব যেন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছিল।
সেদিন রাতে যখন শফিকের ছোট ভাই, তপু, পড়াশোনার জন্য তাদের বাড়িতে এসে উঠল, তখন রীনা জানত না যে তার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। তপু ছিল রীনার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট, সদ্য কলেজে পা দেওয়া এক তরুণ। তার চোখে ছিল তারুণ্যের দীপ্তি, মুখে লেগে থাকত এক সারল্যের হাসি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে গ্রামে বড় হওয়া তপুর মধ্যে ছিল এক স্নিগ্ধতা যা রীনার একাকী মনে প্রশান্তি এনে দিত। প্রথম প্রথম রীনা তাকে ছোট ভাইয়ের চোখেই দেখত, যত্ন করত, পড়াশোনার খোঁজখবর নিত। শফিকের কাজের ব্যস্ততার কারণে রীনার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তপুর উপস্থিতি যেন অনেকটাই পূর্ণ করে দিচ্ছিল।
তবে ধীরে ধীরে ছবিটা বদলাতে লাগল। তপু ছিল খুব সংবেদনশীল। রীনার মনের না বলা কথাগুলো যেন সে সহজেই বুঝে যেত। রীনা যখন পুরনো বাংলা গান শুনত আর গুনগুন করত, তপু চুপচাপ পাশে এসে বসত, কখনও গানটার অর্থ জিজ্ঞেস করত, কখনও বা সুর মেলাত। যখন রীনা ছাদে একা বিকেল কাটাত, তপু তখন তার সাথে এসে আকাশ দেখত, নক্ষত্রদের গল্প শোনাত, যা সে বই থেকে শিখেছিল। রীনার ছোট ছোট আবদার, লুকানো দুঃখগুলো তপুর সূক্ষ্ম দৃষ্টি এড়াত না। সে রীনার সাথে এমনভাবে কথা বলত, যেন রীনাকে সে বহু বছর ধরে চেনে। এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে কেবলই ‘দেবর-ভাবী’র গণ্ডি পেরিয়ে এক ভিন্ন রূপ নিতে শুরু করেছিল।
অপ্রত্যাশিত স্পর্শ ও অনুভূতির জাগরণ
একদিন ছিল ঝুম বৃষ্টি। রীনা ছাদে ভেজা কাপড় তুলতে গিয়েছিল। বৃষ্টির ছাট আর ভেজা মেঝেতে পা পিছলে যেতেই রীনা পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে তপু ছুটে এসে তাকে ধরে ফেলল। হাতের স্পর্শে এক অজানা বিদ্যুৎ খেলে গেল রীনার শরীরে। তপুর চোখ দুটো যেন রীনার চোখে আটকে গেল, সেই চোখগুলিতে ছিল উদ্বেগ আর গভীর এক মুগ্ধতা। সেদিন প্রথম বারের মতো রীনা অনুভব করল, তপুর প্রতি তার অনুভূতি আর শুধু ভাইয়ের মতো নেই। এটা ছিল এক অন্যরকম টান, এক নিষিদ্ধ আকর্ষণ, যা তার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ঘুমন্ত আবেগকে জাগিয়ে তুলল।
এরপর থেকে তাদের দেখা-সাক্ষাৎগুলো আরও নিবিড় হতে লাগল। দিনের পর দিন তারা একে অপরের সঙ্গ কামনা করতে লাগল। লুকিয়ে চোখের দেখা, অকারণে কথা বলা, এমনকি কখনো কখনো অজুহাতে স্পর্শ করা—এইসবের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ প্রেমের অঙ্কুরোদগম হতে লাগল। রীনার মনে অপরাধবোধের কাঁটা বিঁধলেও, তপুর সান্নিধ্য তাকে এক অদ্ভুত শান্তি দিত। সে যেন জীবনের নতুন এক অর্থ খুঁজে পেয়েছিল। তপুর সাথে কাটানো সময়গুলো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্ত। শফিকের অনুপস্থিতি তাদের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিত। তাদের কথোপকথনে এখন শুধু পড়াশোনা বা বাড়ির টুকিটাকি বিষয় থাকত না, তাতে মিশে যেত ব্যক্তিগত অনুভূতি, স্বপ্ন আর কিছু না বলা কথা।
গোপন অভিসার এবং অনুভূতির গভীরতা
একদিন রাতে, শফিক যখন শহরের বাইরে গিয়েছিল জরুরি কাজে, তপু রীনার ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল। বাইরে তখন মৃদু চাঁদের আলো, আর ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যাচ্ছিল। রীনার বুক ধুকপুক করছিল। তপুকে দেখে রীনার মনে হলো, এই মুহূর্তের জন্যেই সে এতদিন অপেক্ষা করছিল, যেন তার অস্তিত্বের প্রতিটি কণা এই ক্ষণের জন্য ব্যাকুল ছিল। সেদিন রাতে, সামাজিকতার সব বেড়া ভেঙে তারা একে অপরের কাছে ধরা দিল। সেই রাতটা ছিল তাদের ভালোবাসার এক নীরব সাক্ষী, যেখানে দুটি মন সমাজের চোখে নিষিদ্ধ এক সম্পর্কে বাঁধা পড়েছিল। রীনার মনে হয়েছিল, এই প্রথম সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে খুঁজে পেয়েছে, নিজেকে উজাড় করে দিতে পেরেছে। তপুর উষ্ণ স্পর্শে সে যেন তার সকল শূন্যতা ভুলে গিয়েছিল।
পরের দিনগুলো যেন এক ঘোরের মধ্যে কাটতে লাগল। তাদের লুকানো প্রেম আরও গভীর হতে থাকল। ছোট ছোট সুযোগে তারা একে অপরের কাছাকাছি আসত, একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে নীরব ভাষায় মনের কথা বলত। রীনা জানত, এই সম্পর্ক ঘোর অন্যায়, সমাজের চোখে এক কলঙ্ক। কিন্তু তপুর প্রতি তার আকর্ষণ এতটাই তীব্র ছিল যে, সে আর নিজেকে আটকাতে পারছিল না। তার বিবেক দংশন করত, কিন্তু হৃদয়ের টান ছিল অপ্রতিরোধ্য। শফিকের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল শ্রদ্ধার, অভ্যাসের; কিন্তু তপুর প্রতি তার অনুভূতি ছিল এক তীব্র আবেগ, এক উন্মাদনা।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
এই প্রেমের পরিণতি কী হবে, তা রীনা জানত না। সমাজের চোখে এই সম্পর্ক ঘোর অন্যায়, নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে সব সম্মান, সব পরিচিতি এক নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কিন্তু রীনার মন তখন এক জটিল জালে জড়িয়ে গিয়েছিল—একদিকে স্বামীর প্রতি কর্তব্য, আরেকদিকে তপুর প্রতি তীব্র আকর্ষণ। সে বুঝতে পারছিল না, এই পথ তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, এর শেষ কোথায়। তার ভেতরে এক প্রবল দ্বন্দ্ব চলছিল। একদিকে তার সংসার, তার সম্মান; অন্যদিকে তপুর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, যা তাকে এক অন্য জীবনের স্বাদ এনে দিয়েছিল।
রোজ রাতে যখন শফিক ঘুমিয়ে পড়ত, রীনা তখন অস্থির মনে বিছানায় শুয়ে থাকত। তার চোখে ভেসে উঠত তপুর মুখ, তার স্পর্শ। এই সম্পর্ক কি চিরকালই লুকানো থাকবে? নাকি একদিন সব প্রকাশ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নগুলো তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। সে জানত, এই পথ কঠিন, কিন্তু এই পথে চলার আকর্ষণ তাকে আরও গভীরভাবে টেনে নিচ্ছিল। সে শুধু তপুর বাহুডোরে আশ্রয় খুঁজেছিল, যেখানে সে যেন নিজেকে সম্পূর্ণ খুঁজে পেয়েছিল, যেখানে সকল ভয়, সকল দ্বিধা নিমেষে মিলিয়ে যেত। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও, সেই মুহূর্তে রীনা কেবল তাদের এই নিষিদ্ধ প্রেমের মায়াজালে আটকা পড়েছিল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.